এতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ বুধবার, পবিত্র মাহে রমজানের ২০তম দিন। আর মাগফিরাতের দশম ও শেষ দিন। একে একে আমাদের থেকে রহমত ও মাগফিরাতের দশক অতিবাহিত হয়ে আমরা রমজানের শেষ দশক অর্থাৎ নাজাতের দশকের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছে গেছি। আর শেষ দশকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো এতেকাফ করা। রাসুল (সা.) প্রতি বছর রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) রমজান মাসের শেষ দশকে মসজিদে এতেকাফ করতেন। তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীরা এতেকাফ করেছেন’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-১৯২২)।

এতেকাফ শব্দটি আরবি ‘আকফ’ শব্দ থেকে নির্গত। এর অর্থ হচ্ছে অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে থাকা বা আবদ্ধ হয়ে পড়া। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো দিন দুনিয়াবি সব কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে রাজি-খুশি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে ও নারীদের ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে এতেকাফ বলে। রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা সুন্নতে মোয়াক্কাদায়ে কেফায়া।

অর্থাৎ এলাকার কিছুসংখ্যক মানুষ আদায় করলেই সকলের পক্ষ থেকে সুন্নতে কেফায়া আদায় হয়ে যাবে। তবে কেউই আদায় না করলে সকলেই গুনাহগার হবে। এতেকাফ করার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও নৈকট্য লাভ করতে পারে। হযরত আতা খোরাসানী রহ. বলেন, এতেকাফকারীর দৃষ্টান্ত ওই ব্যক্তির মতো, যে আল্লাহর দরবারে পড়ে থাকে আর এ কথা বলতে থাকে, হে আল্লাহ! যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আমাকে ক্ষমা না করবেন আমি এখান থেকে নড়ব না (বাদায়েউস সানায়ে-২/১০৮)। এতেকাফের একটি বৈশিষ্ট্য হলো যতক্ষণ মানুষ এতেকাফ অবস্থায় থাকে তার চলাফেরা, কথাবার্তা, পানাহার, ঘুম, প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। আর এতেকাফ সুন্নত হওয়ার হেকমত হলো এটাই যে, এতেকাফ ছাড়া লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও মর্যাদা লাভের নিশ্চিত কোনো পদ্ধতি নেই।

এতেকাফের ফজিলত : এতেকাফের দ্বারা জাহান্নাম দূরে চলে যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন এতেকাফ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন পরিখা পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করবেন; যার দূরত্ব দুই দিগন্তের দূরত্বের থেকে বেশি দূরত্ব হবে। (কানযুল উম্মাল, হাদিস নং-২৪০১৯)

এতেকাফকারী দুই হজ ও দুই ওমরার সাওয়াব পাবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে দশ দিন এতেকাফ করবে তার আমল দুই হজ ও দুই ওমরার সমতুল্য (শুআবুল ইমান, হাদিস নং-৩৬৮১; কানযুল উম্মাল, হাদিস নং-২৪০০৬)।

এতেকাফকারী লাইলাতুল কদরের মর্যাদা লাভ করতে পারবেন। কেননা রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোর যেকোনো একটিতে লাইলাতুল কদর রয়েছে। আর লাইলাতুল কদরের ইবাদত হাজার মাস তথা তিরাশি বছর চার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। সুতরাং যে ব্যক্তি শেষ দশকে এতেকাফ করবে তার প্রতিটি মুহূর্ত যেহেতু ইবাদত হিসেবে গণ্য হচ্ছে ফলে সে লাইলাতুল কদর পেয়ে যাচ্ছেন, এ রাতের সুমহান মর্যাদা লাভ করতে পারছেন। রাসুল (সা.) লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির আশা নিয়েই এতেকাফ করতেন। তিনি প্রথম দশকেও এতেকাফ করেছেন, মধ্য দশকেও করেছেন, এরপর শেষ দশকে করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম দশকে এতেকাফ করেছি, লাইলাতুল কদর তালাশ করেছি, এরপর মধ্য দশকে এতেকাফ করেছি, এরপর আমাকে তা দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, তা শেষ দশকে। অতএব তোমাদের মধ্যে যার এতেকাফ করা পছন্দ হয় সে যেন এতেকাফ করে। এরপর সাহাবায়ে কেরাম তার সঙ্গে এতেকাফ করলেন। তিনি আরো বলেন, আমি তা বিজোড় রাতে পেয়েছি (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৮২৮)।

অতএব আমরা যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাই, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাই, লাইলাতুল কদরের সুমহান মর্যাদা লাভ করতে চাই, সর্বোপরি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চাই, তাদের জন্য উচিত হলো, রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর